OrdinaryITPostAd

হিসাব বিজ্ঞান || Accounting

হিসাব বিজ্ঞান || Accounting

হিসাব বিজ্ঞানঃ

কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সকল লেনদেন হিসাব বইতে সঠিকভাবে লেখা, সংরক্ষণ ও নির্দিষ্ট সময় পর বিশ্লেষণ করে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপন করতে পারার জ্ঞানকে হিসাব বিজ্ঞান বলা হয়।

হিসাব বিজ্ঞানের বিশেষ নামঃ

হিসাববিজ্ঞানকে ইংরেজিতে Accounting বা bookkeeping বলা হয়। হিসাববিজ্ঞানকে “ব্যবসায়ের ভাষা” বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞানকে একটি “তথ্যব্যথা” (Information System) নামেও অভিহিত করা হয়।

হিসাববিজ্ঞানকে একটি “তথ্যব্যবস্থা" (Information System) নামে অভিহিত করা হয়। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন ব্যবহারকারীর চাহিদা বিকেনা করেই লেনদেনসমূহ হিসাবের বইতে লিপিবন্ধ ও আর্থিক বিবরণী আকারে প্রস্তুত করা হয়।

হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবহারকারীঃ

হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান কাজ হলো সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষসমুহকে হিসাব তথ্য সরবরাহ করা। এই তথ্য প্রতিষ্ঠানের বাহিরে (External) এবং ভিতরে (Internal) উভয় পক্ষসমূহ ব্যবহার করে থাকে। হিসাববিজ্ঞানের তথ্য ব্যবহারকারীদের ২ ভাগে ভাগ করা যায়।

১.অভ্যন্তরীন ব্যবহারকারী

হিসাব কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, পরিচালক, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক, মালিক।

২.বাহ্যিক ব্যবহারকারী

পাওনাদার,শেয়ার হোল্ডার, বণিক সমিতি, বিনিয়োগকারী, আয়কর কর্তৃপক্ষ ,ভোক্তা।

প্রতিষ্ঠানের ভেতরের ব্যবহারকারীঃ

১। হিসাব কর্মকর্তা

প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হিসাব কর্মকর্তা প্রণয়ন করে। হিসাব তথ্য ব্যাবহার ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব নয়।

২। ব্যবস্থাপক

ব্যবস্থাপক তাঁর অধঃনস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে কাজ করার সময় হিসাব তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের নির্দেশনা, প্রেষণা দেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন।

৩। পরিচালক

প্রতিষ্ঠানের কোন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হলে পরিচালক হিসাব তথ্য ব্যবহার করে থাকে । বলা যায় হিসাব তথ্য ছাড়া কোন পরিকল্পনা প্রনয়ন করা যায় না।

৪। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক

নিরীক্ষকের প্রধান কাজ হল, হিসাবের সত্যতা যাচাই করা এবং মূল্যায়ন করা। হিসাব তথ্য ছাড়া নিরীক্ষা কাজ করা অসম্ভব।

৫। স্বত্বাধিকারী

প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের বিনিময়ে অর্জিত আয় সম্পর্কে জানার জন্য এ সকল তথ্য প্রয়োজন। তাদের মূলধন কতটুকু নিরাপত্তায় আছে এবং ভবিষ্যতের সাফল্য সম্পর্কে অনুমান করতে পারে।

প্রতিষ্ঠানের বাইরের ব্যবহারকারীঃ

১। পাওনাদার

পাওনাদার ধারে পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। ফলে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের দায় পরিশোধ করার ক্ষমতা আছে কিনা তা জানার জন্য হিসাব তথ্য প্রয়োজন।

২। বণিক সমিতি

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাব তথ্যের উপর ভিত্তি করে করে বণিক সমিতি তাদের কার্যক্রম ও এসম্পর্কিত বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে।

৩। বিনিয়োগকারী

বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা জানতে হিসাব তথ্য বিশ্লেষণ করে পুনঃবিনিয়োগ করবে, নাকি বিনিয়োগ উঠিয়ে নিবে এ সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

৪। আয়কর কর্তৃপক্ষ

হিসাব তথ্য ছাড়া কর ধার্য করা যায় না। তাই কর কর্তৃপক্ষ কর ধার্যের জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাব তথ্য ব্যাবহার করে প্রতিষ্ঠানের আয় বিবরণীতে সঠিক আয় প্রর্দশন করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে তারপর কর ধার্য করে থাকে।

৫। ঋণদাতা

যে কোন ঋণদাতা উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও সুদ ফেরত, নিরাপত্তা বিবেচনা করে ঋণ প্রদান করতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাব তথ্য ব্যাবহার করে।

৬। সরকার

দেশের সরকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাব তথ্য ব্যবহার করে বিক্রয়কর, আয়কর, ও ভ্যাট ধার্য করে।

হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যঃ

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এর আর্থিক ঘটনা সমূহ যেমন: পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, দেনাদার হতে আদায়, পাওনাদারকে পরিশোধ, পণ্য মজুদকরণ, লাভ-ক্ষতি হিসাব, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ব্যবসায়িক হিসাব সঠিকভাবে সম্পন্ন করাই এর উদ্দেশ্য।
ব্যবসায়ের হিসাব সংরক্ষণের জটিল এবং ক্লান্তিকর কাজগুলো দ্রুত, সঠিক ও সহজে প্রস্তুত করাই হিসাব বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য।

হিসাব বিজ্ঞানের জনকঃ

হিসাব বিজ্ঞানের জনক ‘’লুকা প্যাসিওলি’’। পুরো নাম “ফ্রা লুকা বার্তোলোমিয়ো দি প্যাসিওলি।”

তিনি ছিলেন একজন ইতালীয় গণিতবিদ ও পাদ্রী । তিনি লেওনার্দো দা ভিঞ্চির বন্ধু ও গণিত শিক্ষক ছিলেন এবং হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁকে “হিসাববিজ্ঞান ও হিসাবরক্ষণের পিতা” নামে ডাকা হয়।

হিসাব বিজ্ঞানের বইঃ

‘সুম্মা ডি এরিথমেটিকা জিওমেট্রিয়া প্রপোরশনি য়েট প্রপোরশনালিটা’

১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে লুকা প্যাসিওলি আধুনিক হিসাব বিজ্ঞানের মূলনীতি “দুতরফা দাখিলা (Double Entry)” পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে বইটি লিখেন ।

আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

সভ্যতার সূচনা হতে মানুষ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা হিসাব গাছের গায়ে, গুহায় বা পাথরে চিহ্ন দিয়ে রাখত ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের প্রাচীন পদ্ধতিতে রাখত। এক সময় মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করল এবং কৃষিকাজ আরম্ভ করল। ঘরে দাগ কেটে এবং রশিতে গিঁট দিয়ে ফসল ও মজুদের হিসাব রাখা শিখল। আস্তে আস্তে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, সমাজ বিস্তার লাভ করে, বিনিময় প্রথা চালু হয়, মুদ্রার প্রচলন হয় এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য শুরু হয়। ক্রয়-বিক্রয়, জমা-খরচ, দেনা- পাওনা এবং অন্যান্য লেনদেন হিসাবের বইতে অঙ্কের মাধ্যমে লেখা শুরু হয়।

১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে লুকা প্যাসিওলি নামে একজন ইতালীয় গণিতবিদ 'সুম্মা ডি এরিথমেটিকা জিওমেট্রিয়া প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিটা' নামে একটি গ্রন্থ লিখেন এবং এতে হিসাবরক্ষণের মূল নীতি "দুতরফা দাখিলা " ব্যাখ্যা করা হয়।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের অগ্রগতি হয় এবং এরই ফলে হিসাববিজ্ঞানেরও উন্নতি হয়। ব্যবসায় যেমন ছোট থেকে বড় হতে থাকে তেমনি এর পরিধিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমান কম্পিউটারের যুগে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে হিসাবের বই হাতে লিখার পরিবর্তে কম্পিউটারে করা হয়। ফলে সময় ও শ্রম লাঘবের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহজ হয়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হিসাববিজ্ঞানের উন্নতি বর্তমানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, অব্যবসায়ী, সরকারি, বেসরকারি, মুনাফাভোগী ও অমুনাফাভোগী সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানে হিসাববিজ্ঞানের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪